লালনের আখড়ায় সাঙ্গ হল সাধুসঙ্গ

বাউল ফকির লালন শাহ্‌য়ের ১৩২তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে স্মরণোৎসবের শেষদিনে সাধুসঙ্গ সাঙ্গ করে আপন ঠিকানায় ফিরেছেন দূর-দূরান্ত থেকে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় আসা বাউল, সাধু-ভক্ত, অনুসারীরা।

আগত ভক্ত অনুসারীরা মঙ্গলবার দুপুরে পূর্ণসেবা গ্রহণের মধ্যদিয়ে নিজস্ব ঘরানার আচার-অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছেন। তিন দিনের সাধুসঙ্গের ইতি টানতে বুধবার সকাল থেকেই সঙ্গে আনা গাট্টি-বোঁচকা গুছিয়ে শেষবারের মতো ভক্তদের সঙ্গে ভক্তি-কুশল বিনিময় করেছেন বাউলরা।

পরে অশ্রুভরা চোখে বিদায় নিয়ে তারা আখড়াবাড়ি ছেড়ে রওয়ানা হয়েছেন নিজ নিজ আশ্রমের উদ্দেশে। তারা বলছেন, এই মহামিলনের শিক্ষা ‘মানবপ্রেম’ ছড়িয়ে দেবেন দেশ থেকে দেশান্তরে।

বিদায় বেলায় রাজশাহী থেকে আসা ফকির আমিরুল শাহ অশ্রুসিক্ত নয়নে বলেন, “সাধুদের সব কিছুর মূলে গুরুভক্তি। গুরুকে ভজেই সর্বদা তারা পরমাত্মার সন্ধান করে ফেরেন। সেই গুরুকে বারবার প্রণাম ও ভক্তি জানিয়ে শিষ্যরা বিদায় নিলেও আবার তারা ঘুরে ঘুরে আসেন গুরুর এই তীর্থধামে।

“তাদের যে গুরুর চরণস্পর্শ করা বড়ই দরকার। নইলে সে তো পাবে না আর দ্বীন-দরিয়ার পাড়।”

ঢাকা সাভার থেকে আসা এনাম শাহ বলেন, “সমাজের অসঙ্গতি, সাম্প্রদায়িকতা, মানুষে মানুষে অযথা হানাহানি দূর করে চিরন্তন মানবধর্ম প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন লালন।

“সাঁইজি তার পদাবলী ও বাণীতে মানুষকে প্রকৃত শুদ্ধ মানুষ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তাই এই উৎসব কেবল উৎসব নয় এখান থেকে লালনের এমন শিক্ষা ও মানবপ্রেম ছড়িয়ে দেবেন দেশব্যাপী।”

লালন অনুসারী হৃদয় শাহ জানান, লালন শাহ্‌র ওফাত দিবসে অনুসারীদের মাঝে এক নিবিড় আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সারা বছরের বহুল প্রতিক্ষিত এই মহামিলনে ঘটে যাওয়া সাধুসঙ্গ প্রতিটা ভক্ত অনুসারীর মধ্যে স্থানান্তরিত হয়। তারা এই সঙ্গকে আত্মধারণ করে ফিরে যাবেন আপন আলোয়।

তিনি বলেন, “সাঁইজির যে দর্শন আজ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের অনেক দেশের মানুষকে আকৃষ্ট করেছে সেটা নিছক উৎসব পালনের কারণে নয়। এটা আত্মস্বপ্ন থেকে আত্মশুদ্ধির পথে নিয়ে যায়। যখন জ্ঞান সাধনার আত্মতৃষ্ণা ক্রমে বৃদ্ধি পায়।

“সেকারণে সাঁইজির ভাবাদর্শে একে অন্যের সান্নিধ্যে এসে গানে গানে প্রবেশ করেন মায়ার জগতে।”

হৃদয় শাহ জানান, পরম মমতায় শ্রদ্ধাভরে গুরুকে বারবার প্রণাম ও নানা রকম ভক্তি জানিয়ে বিদায় নেন শিষ্যরা। তাদের আবার দেখা হবে লালনের দোল অনুষ্ঠানে।

বাউল ফকির আর সাধুদের ছাড়াই বুধবারও সন্ধ্যায় লালন মঞ্চে আলোচনা সভা ও রাতভর লালন সংগীত পরিবেশিত হবে।

scroll to top